নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তি


বিগত দু’দশকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে এবং শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশে আইনী কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে; নেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ। প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস। দক্ষিণ আমেরিকার ডমিনিকান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী শাসক রাফায়েল ট্রুজিল্লোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ১৯৬০ সালের এই দিনে প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা ও মিনার্ভা মিরাবেল নামে তিন বোনকে হত্যা করা হয়। ২৫ নভেম্বরের এ নির্যাতন বিশ্বের নারী সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে ১৯৮১ সালে দক্ষিণ আমেরিকার নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৩ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে এ দিবসটি স্বীকৃতি পায়। তখন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২৫ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
জাতিসংঘ প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংগঠনকে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করে আন্তর্জাতিক নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস পালন করে থাকে। নারী নির্যাতন এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা ওল্টালেই দেখা যায় এসিড মারা, ফতোয়া দিয়ে দোররা মারা, বিষ খাইয়ে দেয়া, গায়ে আগুন লাগানো, হত্যার মতো জঘন্য নির্মম এবং পাশবিক ঘটনার সমারোহ। আরো আছে ইভ টিজিংয়ের মাধ্যমে নারীদের উত্ত্যক্ত, অপহরণ, লাঞ্ছিত করা। নারীরা পদে পদে লাঞ্ছিত আর অপমানিত হচ্ছে। প্রতি বছর নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস পালিত হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড, এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম এর আর্থিক সহায়তায় ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার বর্তমানে একটি মোবাইল অ্যাপস প্রবর্তন করেছে। নির্যাতনের শিকার কিংবা নির্যাতনের আশংকা রয়েছে এরকম নারী ও শিশুদের তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা প্রদান করার জন্য এই অ্যাপস ব্যবহার করা হবে। সাধারণত কোন নির্যাতনের ঘটনা ঘটার পর আমরা সে সম্পর্কে অবগত হই। অনেকক্ষেত্রে ভিকটিমের জন্য ঘটনা ঘটার সময় প্রয়োজনীয় সাহায্য চাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও উপযুক্ত প্রমানের অভাবে অপরাধ প্রমান করা দুঃসাধ্য হয়। এই সকল সমস্যার সমাধানে স্মার্ট ফোনে ব্যবহারযোগ্য ’’জয়’’ নামক একটি মোবাইল অ্যাপস উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই অ্যাপস এ পরিবার/ বন্ধু-বান্ধবের ৩টি মোবাইল নম্বর এফএন্ডএফ হিসেবে সংরক্ষণ করা যাবে। এছাড়াও, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার (১০৯), নিকটস্থ থানা এবং পুলিশ কন্ট্রোল রম্নমের নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপসে সংরক্ষিত থাকবে। যদি কোন নারী অথবা শিশু সমস্যার মধ্যে পড়েন তাহলে সে মোবাইলে অ্যাপস এর জরম্নরী অবস্থা লিখিত আইকন এ ষ্পর্শ করলে এটি সংরক্ষিত নম্বর সমূহে একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠাবে। সংকটাপূর্ণবস্থায় জরম্নরী অবস্থা লিখিত মেন্যুটি ক্লীক করার পরিস্থিতি না থাকলে মোবাইল পাওয়ার বাটন পরপর ৪ প্রেস করলে মোবাইল ভাইব্রেট হবে।এরপর অরেকবার প্রেস করার পর সংক্ষিপ্ত বার্তা সংরক্ষিত নম্বরসমূহে চলে যাবে। ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার এবং পুলিশের নিকট জিপিএস লোকেশনসহ এই বার্তাটি যাবে। যার ফলে পুলিশ, ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার এবং ভিকটিমের আত্মীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। এই অ্যাপস স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাপচারিতা সংরক্ষন করবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ছবি তুলবে। এই সকল তথ্য মোবাইলে সংরক্ষিত থাকবে। যদি ব্যবহারকারী অনলাইনে থাকেন তাহলে তথ্যসমূহ (অডিও, ছবি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ্যাপসে নির্ধারিত সার্ভারে প্রেরিত হবে। এইসব তথ্য পরবর্তীতে অপরাধ প্রমানে সহায়তা করবে। নারীর নিরাপত্তা ও আইনী অধিকার সম্পর্কিত তথ্য বাংলা ও ইংরেজীতে এই অ্যাপসে দেয়া থাকবে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ হয়ে যাবে। এর ফলে নারী ও শিশুরা তাদের অধিকার, নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিধি সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে।

এখানে আরও বেশ কিছূ গুরম্নত্বপূর্ণ নম্বর থাকবে যা কোন জরম্নরী অবস্থায় কাজে লাগতে পারে। এই এ্যাপসের একটি ওয়েব ভার্সন ও রয়েছে যেখানে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু অতীতে ঘটে যাওয়া কোন নির্যাতনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবে। সাথে ঘটনার কোন প্রমাণাদি সংযুক্ত করেও পাঠাতে পারবে। এই সকল অভিযোগ ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার এবং পুলিশ কন্ট্রোল রুম মনিটরিং করবে। মূলত যেসকল কর্মজীবী নারী, শিক্ষার্থী অথবা বিভিন্ন প্রয়োজনে যে নারীদের ঘরের বাইরে যেতে হয় তাদের সাহায্যের জন্যই এই অ্যাপস। আশা করা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে এই অ্যাপস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।